ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার নিয়ম এবং ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার দরখাস্ত লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী। কেননা অনেক সময় ই পাসপোর্ট আবেদন করার পরে ব্যক্তিগত যেকোনো কারণে সেটা বাতিল করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু এর জন্য অবশ্যই একটা নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয়।
যদিও বাংলাদেশে বর্তমানে ই পাসপোর্ট সেবাটি খুব সহজ ও প্রযুক্তি নির্ভর করা হয়েছে, কিন্তু আপনি যদি বাতিল করতে চান তাহলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। আজ আমরা ধারাবাহিকভাবে আপনাদেরকে ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার নিয়ম ও সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি, পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার দরখাস্ত লেখার নিয়ম এবং ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার কারণসমূহ জানানোর পাশাপাশি জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে জানাবো। তাই বিস্তারিত জানতে সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ুন।
ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার নিয়ম | ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিলের কার্যকরী পদ্ধতি
পাসপোর্ট আবেদন করার পর যদি ভুল তথ্য পরিলক্ষিত হয় তাহলে উক্ত আবেদন বাতিল করার প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়াও ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার আরো একাধিক কারণ রয়েছে। যাইহোক আপনার যদি পাসপোর্ট বাতিলের প্রয়োজন হয় তাহলে ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার জন্য দুইটি মাধ্যম অবলম্বন করতে পারেন। একটি হচ্ছে অনলাইনের মাধ্যমে পাসপোর্ট এর ভুল সংশোধন করে নেওয়া, আরেকটি হচ্ছে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে ভুল আবেদন পত্রটি ফিরিয়ে নিয়ে নতুন ভাবে পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম জমা দেওয়া।
তো যদি আপনি অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করতে চান সেক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে যে কাজগুলো করতে হবে আপনাকে, সেগুলো হলো –
প্রথমত: ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করতে হলে আবেদন বাতিলের সময়সীমা নির্ধারণ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত: আপনিকে সরাসরি ভিজিট করতে হবে বাংলাদেশ পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন ওয়েবসাইটে। যেখানে আপনি পূর্বে আবেদন করেছিলেন। (পাসপোর্ট আবেদনের নিয়ম জানতে ক্লিক করুন)
তৃতীয়ত: আপনার একাউন্টে লগইন করতে হবে। এর জন্য আপনার প্রয়োজন পড়বে মেইল অথবা অ্যাপ্লিকেশন আইডি ও পাসওয়ার্ড।
চতুর্থত: আপনাকে প্রবেশ করতে হবে application status অপশনটিতে।
পঞ্চমত: আবারো enrolment আইডি এবং ডেট অফ বার্থ বসিয়ে ক্যাপচা পূরণ করে ক্লিক করতে হবে সার্চ অপশানে।
ষষ্ঠমত: নির্বাচন করতে হবে cancel অ্যাপ্লিকেশন অপশন। অতঃপর বাতিল করার কারণ ও প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্টস আপলোড করে ক্লিক করতে হবে সাবমিট বাটনে।
ব্যাস এতোটুকুই। আর হ্যাঁ, যদি আপনি ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার জন্য অফলাইন মাধ্যম ফলো করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে সরাসরি যেতে হবে পাসপোর্ট অফিসে। অনেকেই হয়তো ভাবতে পারেন এক্ষেত্রে দালাল ধরার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আমরা বলব একদমই নয়।
কেননা খুবই সাধারণ কয়েকটি কাজ করার মাধ্যমে আপনি আপনার ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করে নিতে পারবেন। এর জন্য আপনাকে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক বরাবর শুধুমাত্র একটি দরখাস্ত লিখতে হবে এবং প্রয়োজনীয় কিছু ডকুমেন্টস প্রদান করতে হবে। জানতে হলে নিচের অংশটুকু আরো মনোযোগ সহকারে পড়ুন। সেই সাথে পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে ও পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এ ব্যাপারে জানতে আগ্রহী হলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে আরও দুটি আর্টিকেল এখনই পড়তে পারেন।
ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল দরখাস্ত লেখার নিয়ম
মনে করুন আপনি রাজশাহী জেলার বাসিন্দা। তো ভুল তথ্য প্রদান করে ই-পাসপোর্ট আবেদন করে ফেলেছেন, এখন তা বাতিল করতে চাচ্ছেন। তাই এ পাসপোর্ট অফিসে সহকারি পরিচালকের নিকট আপনি ঠিক যে পদ্ধতিতে একটি দরখাস্ত পাঠাতে পারেন তা হচ্ছে–
তারিখ: ১০/০১/২০২৫
বরাবর, বিষয়: ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল দরখাস্ত জনাব, অতএব, মহোদয়ের নিকট বিনীত অনুরোধ এই যে, উপরিউক্ত সমস্যার কথা বিবেচনা করে আমার ই পাসপোর্ট আবেদনটি বাতিল করতে আপনার একান্ত মর্জি হয়। বিনীত নিবেদক- নাম: মো: নিরব হোসেন। |
ব্যাস এতোটুকুই। এটি লেখার পর আপনাকে প্রিন্ট করে বের করে নিতে হবে। অতঃপর তা পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে চলে যাবেন। এরপর উক্ত অফিসের সহকারী পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করে তার হাতে উক্ত দরখাস্তটি হস্তান্তর করবেন। আপনার কাজ এ-পর্যন্তই। মূলত নির্দিষ্ট কিছু সময়ের পর আপনার ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করা হবে।
ই-পাসপোর্ট আবেদন বাতিল কার্যকরের সময়সীমা
ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করেছেন সঠিক নিয়ম মেনে, টিক নির্দিষ্ট কতদিনের মধ্যে তা বাতিল হবে জানতে চান অনেকেই। মূলত এই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার জন্য সর্বোচ্চ একদিন অথবা দুই দিন লেগে থাকে। কখনো কখনো সেটা তিনদিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। ব্যাস পরবর্তীতে আপনি পুনরায় ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন বা নতুন অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে পাসপোর্ট এর কার্যপ্রক্রিয়া সম্পাদন করতে সক্ষম হবেন।
আর হ্যাঁ, অনেকেই রয়েছেন একটা বিষয় নিয়ে কনফিউশনে পড়েন। যে ভুলবশত আপনি আপনার ই পাসপোর্ট এর তথ্য ভুল দিয়েছেন ফলে সেই পাসপোর্ট বাতিল করে পুনরায় আবেদন করতে যাচ্ছেন। কিন্তু আগে যে ফি প্রদান করেছিলেন সেটা কি বাতিল? এ প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে না, বাতিল নয়।
তবে ছোট্ট একটা শর্ত রয়েছে, যদি আবেদনকারী ই পাসপোর্ট আবেদনের ফি অনলাইন পেমেন্ট ekpay অথবা মোবাইল ব্যাংকিং সিলেক্ট করে পরিশোধ করেন তাহলে সেটা অফ ফেরতযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হবে। আর যদি আপনি অফলাইনে পেমেন্ট করেন মানে ব্যাংক ড্রাফট অথবা এ চালান সেক্ষেত্রে পুনরায় ফি মানে ই পাসপোর্ট এর আবেদন করার জন্য আলাদা কোন টাকা দ্বিতীয়বার প্রদান করতে হবে না। শুধুমাত্র নতুন আবেদনের সংযুক্ত কপি জমা দিলেই চলবে । তাই বিষয়টা মাথায় রাখবেন।
তবে যদি এ ব্যাপারে আরো সুস্পষ্ট ধারণা পেতে চান তাহলে আপনি ই পাসপোর্ট এর কাস্টমার সাপোর্টের মাধ্যমে সহায়তা নিতে পারেন। আবার কখনো কখনো স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবেদন বাতিল করা সম্ভব হয়ে ওঠে না, সমস্যার সমাধানের জন্য সরাসরি কল করুন হট লাইন নম্বর ১৬২৩৪ এ অথবা ইমেইল করুন support@passport.gov.bd তে। আশা করি আপনার সমস্যার সমাধান মিলবে অতি দ্রুত।
ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার সাধারণ কারণ সমূহ
পাসপোর্ট বাতিল করার জন্য বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। যেমন–
- ভুল তথ্য প্রদান করা হয়েছে
- ডকুমেন্টস এর অসঙ্গতি দেখা দিয়েছে
- জরুরী পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে
- ফি প্রদান সংক্রান্ত কোনো ত্রুটি দেখা দিয়েছে
- অথবা আবেদনকারীর পাসপোর্ট এর প্রয়োজনীয়তা বাতিল হয়েছে।
ব্যাস এগুলোই। আর হ্যাঁ, অনেকেই আবার ই পাসপোর্ট আবেদন সংশোধন করার নিয়ম ও ইমারজেন্সি পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কেও জানতে চান। এর জন্য চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে আর বিস্তারিত জানুন এ ব্যাপারে।
পরিশেষে: তো অডিয়েন্স বন্ধুরা, ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার নিয়ম ও সম্পূর্ন কার্যপ্রক্রিয়া নিয়ে আমাদের আলোচনা এ পর্যন্তই। দালালের সহযোগিতা না নিয়ে আমরা বলবো নিজে নিজেই খুবই সাধারণ এই পদ্ধতিতে পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করুন আপনার প্রয়োজনে। আর যদি কোন সমস্যার সম্মুখীন হন তাহলে কমেন্ট করুন আমাদের এই পোষ্টের কমেন্ট সেকশনে। আমাদের টিম আপনাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার চেষ্টা করবে। সবাইকে শুভকামনা ও ভালোবাসা জানিয়ে শেষ করছি আল্লাহ হাফেজ।