আমরা সবাই কমবেশি জানি– পাসপোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, যা একজন ব্যক্তির আন্তর্জাতিক পরিচয় পত্র হিসেবে কাজ করে থাকে। পাসপোর্ট শুধুমাত্র ভ্রমণের অনুমতি প্রদান করে এমনটা নয়, বরং এটা আমাদের জাতীয়তা এবং ব্যক্তিগত পরিচয় এর প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। যাদের উদ্দেশ্য বাইরের দেশে যাওয়া ও সেটেল হওয়া তারাই ই-পাসপোর্ট করতে চান। এজন্য প্রশ্ন উঠে আসে– ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
আজকের এই ছোট্ট নিবন্ধনে আমরা পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে, ই পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি, দশ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে, নতুন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং বিবাহিতদের পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এ সম্পর্কে জানাবো খুঁটিনাটি।
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
“ই-পাসপোর্ট” অর্থাৎ ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট আমাদের এই বাংলাদেশে ইতোমধ্যে চালু হয়েছে। মূলত 119 তম দেশ হিসেবে আমাদের এই দেশ এই পাসপোর্ট সেবা চালু করেছে বলে জানা যায়। আর তাই যদি আপনি পাসপোর্ট করতে চান, তাহলে ঘরে বসে শুধুমাত্র একটি ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনের সহযোগিতায় সেটা করে ফেলতে পারবেন। তবে অবশ্যই এজন্য আপনাকে একটি নিয়ম ফলো করতে হবে।
ইতিমধ্যে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে, ১০ বছর মেয়াদী ই পাসপোর্ট ফি কত টাকা এবং পাঁচ বছর মেয়াদী ই পাসপোর্ট ফি কত টাকা এ সম্পর্কে নতুন কিছু আর্টিকেল পাবলিশ করেছি।
এছাড়াও ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন ফরম কিভাবে তুলতে হয়, পাসপোর্ট এ ভুল নাম সংশোধনের নিয়ম কি এবং কিভাবে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা চেক করা যায় ইত্যাদি এ-সম্পর্কেও রয়েছে অসংখ্য আর্টিকেল। যেগুলো আপনারা আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করে এখনই পড়ে ফেলতে পারেন। তবে যাই হোক আসুন তার আগে জানি – যদি আপনি ই পাসপোর্ট করতে চান তাহলে মূলত কি কি ডকুমেন্টও এর প্রয়োজন পড়বে!
নতুন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে | ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে ২০২৪
আপনি যদি ই পাসপোর্ট করতে চান তাহলে আবেদনের জন্য পাসপোর্ট এর ধরনের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন কাগজপত্রের প্রয়োজন পড়বে। দেখুন আপনি হয়তো জানবেন, পাসপোর্ট এর ধরন সাধারণত তিনটি। কেননা সচরাচর আবেদনকারীর বয়স হিসেবে পাসপোর্ট এর ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন শিশুদের পাসপোর্ট, প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট এবং যারা সরকারি চাকরি করেন তাদের পাসপোর্ট, এগুলো মূলত এক একটি ধরন।
তো যদি আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আপনার পাসপোর্ট তৈরি করেন, সেক্ষেত্রে নিম্ন বর্ণিত কাগজগুলো সবার প্রথমে সংগ্রহ করতে হবে। যথা –
- আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র অর্থাৎ এনআইডি কার্ডের ফটোকপি।
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- ইউটিলিটি বিলের কাগজ।
- ইউনিয়ন অথবা পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রাপ্ত নাগরিকত্ব সনদপত্র।
- অনলাইন আবেদনের সারাংশ পত্র।
- অনলাইন আবেদনের কপি।
- আবেদনফি ব্যাংক ড্রাফট এর কপি ।
- আবেদনকারী প্রার্থী যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রাপ্ত স্টুডেন্ট কার্ড ও সার্টিফিকেট এবং
- বিবাহিত হয়ে থাকলে নিকাহনামা পত্র।
আর হ্যাঁ, যদি ইতোমধ্যে আপনার পাসপোর্ট করা হয়ে থাকে কিন্তু শুধুমাত্র আপনি সেটাকে ইলেকট্রনিক পাসপোর্টে রূপান্তরিত করতে চান সেক্ষেত্রে ই পাসপোর্ট এর জন্য যে যে কাগজপত্র সাথে করে আনতে হবে সেগুলো হলো–
E-Passport এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র |
✓ অনলাইন আবেদন পত্রের সারাংশের প্রিন্ট কপি ও বর্তমান পাসপোর্ট
✓ রেজিস্ট্রেশন কার্ডের রঙিন এক কপি ✓ জাতীয় পরিচয় পত্র অর্থাৎ এনআইডি কার্ডের রঙিন এক কপি। ✓ বিবাহিত হয়ে থাকলে বিবাহিত সংযোজনের জন্য কাবিননামা বা ম্যারেজ সার্টিফিকেটের রঙিন এক কপি। ✓ স্বামী বা স্ত্রীর পাসপোর্ট এর জন্য তাদের নিজ নিজ জাতীয় পরিচয় পত্রের এক কপি। ✓ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়ার রশিদের অনলাইন কপি ✓ পোস্ট অফিসের 4,000 ওনের ডেলিভারি স্টিকার সহ খাম। বিশেষ দ্রষ্টব্য: অনেকে হয়তো জানেন না যে ই পাসপোর্ট আবেদনের সময় অবশ্যই অবশ্যই বর্তমান ঠিকানা হতে হয় কোরিয়ান ঠিকানা। তাই টাকা জমা দেওয়ার ব্যাংক হবে KEB Hana Bank, A/C no.166-890000-59001, A/C name: 주한 방글라데시 대사관 এবং স্থায়ী ঠিকানা হবে বাংলাদেশ। |
১০ বছর মেয়াদি ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
দশ বছর মেয়াদী ই পাসপোর্ট করতে মূলত ইতিমধ্যে আমরা যে ডকুমেন্টগুলোর কথা উল্লেখ করেছি ওই একই ডকুমেন্ট সংগ্রহ করার প্রয়োজন পড়ে। অতএব প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে আপনি যদি ই পাসপোর্ট করতে ফরম পূরণ করেন তাহলে জাতীয় পরিচয় পত্র অথবা স্মার্ট কার্ড এবং ছবি জমা দিতে হবে। আর যদি আপনার বয়স ১৮ বছরের কম হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয় পত্রের পরিবর্তে জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট ও মা বাবার ছবি ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি জমা করতে হবে।
আর হ্যাঁ, যদি বলেন ১০ বছর মেয়াদী ই পাসপোর্ট করতে আলাদা কোন কাগজের প্রয়োজন পড়ে কিনা তাহলে বলব “না “। কারণ এখানে বছর মূলত টাকার উপর নির্ভর করে। যদি আপনি বাংলাদেশী হয়ে পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করেন সেক্ষেত্রে পাঁচ বছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে এটা ২১ কর্মদিবস হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে এবং টোটাল ফি পড়বে ৪ হাজার ২৫ টাকা। আশা করছি বিষয়টি আপনাদের কাছে ক্লিয়ার। এখন দেখুন- যদি আপনি এই পাসপোর্ট আবেদন করতে চান সেক্ষেত্রে সবার প্রথমে আপনাকে কি করতে হবে!
ই পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে করণীয়
ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হলে সর্বপ্রথম অনলাইনে আবেদন করার নিয়ম জানতে হবে আপনাকে। এর জন্য করনীয় কাজ হবে সবার প্রথমে www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইট ভিজিট করা। কেননা আপনি মূলত এই ওয়েবসাইট থেকে নিজেই ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। যাইহোক যদি আপনি এই মুহূর্তে আবেদন করতে চান তাহলে ক্লিক করুন সাজেস্ট কৃত লিঙ্কে।
যেখানে গেলে আপনার সামনে নিচে দেওয়া ইমেজের মত একটি পেজ সাজেস্ট করা হবে অতঃপর পর্যায়ক্রমে আপনি কয়েকটি ধাপ পেরুলেই আবেদনকার্য সম্পন্ন করতে পারবেন। কিন্তু হ্যাঁ, মনে রাখবেন আবেদনপত্রের বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী অবশ্যই আপনাকে বাছাই করতে হবে ‘KOREA, REPUBLIC OF’
তো পাঠক বন্ধুরা, ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এই নিয়ে আজকের আলোচনা এপর্যন্তই। আসুন সবশেষে কয়েকটি জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর জানার মাধ্যমে আজকের আলোচনার সমাপ্তি জানা যাক।
ই পাসপোর্ট আবেদন করার ধাপসমূহ কি কি?
✓ ই পাসপোর্ট আবেদনের ধাপসমূহ হচ্ছে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন কার্যপ্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা। এর জন্য সরাসরি ভিজিট করতে হবে www.epassport.gov.bd ওয়েব সাইটে। অতঃপর সঠিক তথ্য প্রদান করুন যেমন নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ এনআইডি নাম্বার।
এরপর আবেদন ফ্রি প্রদান করুন। পেমেন্ট পদ্ধতি হচ্ছে ব্যাংক পেমেন্ট অথবা মোবাইল ব্যাংকিং অর্থাৎ বিকাশ কিংবা রকেট। দ্বিতীয় এই কার্যপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে তৃতীয় ধাপে গিয়ে এপয়েন্টমেন্ট বুকিং এর কাজ করতে হয়। অতঃপর বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান ডকুমেন্ট যাচাই এর পরবর্তীতে আপনি পাসপোর্ট গ্রহণ করতে পারবেন। যদি এ সম্পর্কে আরো ক্লিয়ার ধারণা পেতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে এখনই ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন ফরম সম্পর্কিত এই আর্টিকেলটি এক নজরে দেখে আসুন।
ই পাসপোর্ট আবেদনের সময়সীমা কত?
✓ ই পাসপোর্টের আবেদনের সময়সীমা সাধারণত ১৫ কার্যদিবস হয়ে থাকে। তবে জরুরী ভিত্তিতে সেটা ৭ কার্যদিবস করা হয় আর যদি সুপার জরুরি হয়ে থাকে মানে অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে তিন কার্য দিবসের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে ই পাসপোর্ট আবেদনের সময়সীমা।
ই পাসপোর্ট এর সুবিধা কি কি?
✓ ই পাসপোর্ট এর একাধিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদী বৈধতা। এছাড়াও–
- উন্নত নিরাপত্তা
- দ্রুত ইমিগ্রেশন প্রক্রিয়ার সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা
- ভ্রমণের সুবিধা ও ডিজিটালাইজড সেবা।
ই পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় টিপস ও সতর্কতা কি?
✓ আপনি যখন ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট করবেন সে সময় অবশ্যই
- আবেদন ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকবেন। কেননা তথ্য ভুল হলে সেটা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অথবা পুনরায় সংশোধনের ঝামেলা পোহাতে হয়।
- নির্ধারিত সময়ে অ্যাপয়েনমেন্ট কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবেন যখন ই পাসপোর্ট প্রদান করা হবে পাশাপাশি নথি যাচাইয়ের সময় অতিরিক্ত নথিপত্র বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অবশ্যই সঙ্গে রাখবেন।
ই পাসপোর্ট করার সময় পুরনো পাসপোর্ট না থাকলে কি করতে হবে?
✓ যদি আপনি ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট করতে চান কিন্তু আপনার পূর্বের পুরনো পাসপোর্ট না থাকে তাহলে নতুন পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হবে।
পাসপোর্ট করার জন্য কি কোথাও যেতে হয়?
✓ না পাসপোর্ট করার জন্য সচরাচর কোথাও যেতে হয় না। কেননা পাসপোর্ট এর জন্য অনলাইনে আবেদন করা বাধ্যতামূলক। তবে আপনি যদি চান তাহলে আবেদন কেন্দ্রে গিয়ে তাদের সহায়তা নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারবেন।