পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে? পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম কি? ই পাসপোর্ট ফি কত টাকা? ব্যাংকের মাধ্যমে কি পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়া যায়? আর যদি দেওয়া যায় তাহলে কোন কোন ব্যাংকে ই-পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়া যায়? সকল প্রশ্নের উত্তর থাকছে আমাদের আজকের এই নিবন্ধনে।
কেননা পাসপোর্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ফি এবং এর জমা দেওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত তথ্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সবাই জানি, পাসপোর্ট একটি অত্যাবশ্যকীয় নথিপত্র। আর বাংলাদেশে পাসপোর্ট তৈরির ফি নির্ধারিত হয় পাসপোর্ট এর ধরন, মেয়াদ ও প্রসেসিং টাইম এর উপর ভিত্তি করে।
আপনি যদি এ ব্যাপারে নতুন হয়ে থাকেন তাহলে হয়তো জানেন না– পাসপোর্ট এর মেয়াদ এবং পৃষ্ঠার উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশী পাসপোর্ট সাধারণত চার ধরনের হয়। অন্যদিকে শুধুমাত্র মেয়াদের উপর ভিত্তি করে দুই ধরনের ই পাসপোর্ট দেখা যায়।
এমনকি শুধুমাত্র পৃষ্ঠা সংখ্যার দিকে লক্ষ্য করেও আরো দুই ধরনের পাসপোর্ট দেখা যায়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে– কোন ধরনের পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে এবং পাসপোর্ট এর টাকা জমা দেওয়ার সঠিক নিয়ম ও সবচেয়ে সহজ উপায় কি!
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
পাসপোর্ট করতে সর্বনিম্ন ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৪ হাজার পর্যন্ত টাকার প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশে বর্তমানে দুই ধরনের পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে– মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট, যাকে সংক্ষেপে বলা হয় MRP। অন্যটি হচ্ছে ই পাসপোর্ট (E-Passport)
যদিও বর্তমানে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনেক ক্ষেত্রে কম ব্যবহৃত হয়। কেননা এটি পুরনো ধরনের পাসপোর্ট। তবে কখনো কখনো এটি এখনো পাওয়া যায়। আর অন্যটি হচ্ছে ই পাসপোর্ট। যেটা উন্নত প্রযুক্তি সম্বলিত পাসপোর্ট, যা সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখে। যেটা আপনি খুব সহজেই তৈরি করে নিতে পারেন। তবে এর জন্য ই পাসপোর্ট এর কিছু প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট লাগবে। ঐ সকল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলো কি কি যদি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে এখনই ক্লিক করুন সাজেস্টকৃত লিংকে এবং জেনে নিন এ-নিয়ে খুঁটিনাটি।
ই পাসপোর্ট ফি কত | পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে ২০২৫
বর্তমানে পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে এবং ই পাসপোর্ট ফি কত টাকা পাশাপাশি আপনি যদি এমআরপি পাসপোর্ট করতে চান তাহলে এক্ষেত্রে কত টাকা ফি পড়বে তার তালিকা সংযুক্ত করছি আলোচনার এ পর্যায়ে।
MRP পাসপোর্ট ফি এর তালিকা
পাসপোর্ট মেয়াদ বা সময়কাল | স্ট্যান্ডার্ড ফি | এক্সপ্রেস ফি |
(৩২ পৃষ্ঠা) পাঁচ বছর মেয়াদী | ৩৪৫০ টাকা | ৬৯০০ টাকা |
(৪৮ পৃষ্ঠা) পাঁচ বছর মেয়াদী | ৫৭৫০ টাকা | ১১৫০০ টাকা |
ই পাসপোর্ট ফি | পাসপোর্ট ফি এর তালিকা
পাসপোর্ট এর মেয়াদ | স্ট্যান্ডার্ড ফি | এক্সপ্রেস ফি | সুপার এক্সপ্রেস ফি | |
(৪৮ পেজ) পাঁচ বছর মেয়াদী | ৪০২৫ টাকা | ৬৩২৫ টাকা | ৮৬২৫ টাকা | |
(৬৪ পেজ) পাঁচ বছর মেয়াদী | ৬৩২৫ টাকা | ৮৬২৫ টাকা | ১২০৭৫ টাকা |
এছাড়াও ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট করতে এর থেকে বেশি টাকার প্রয়োজন পড়ে। মূলত এক্ষেত্রে কত পেজ এর পাসপোর্ট কত বছর মেয়াদি হবে এবং আলাদা আলাদা পাসপোর্ট এর জন্য ঠিক কত টাকা খরচ পড়বে যদি এ ব্যাপারে ক্লিয়ার ধারণা পেতে চান তাহলে “১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে” উক্ত আর্টিকেলটি এক নজরে পড়ে ফেলুন। আর জেনে নিন এ বিষয়ে বিস্তারিত।
তো অডিয়েন্স বন্ধুরা, আশা করছি এ পর্যন্ত এটা আপনি স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছেন– পাসপোর্ট করতে ঠিক কত টাকা লাগতে পারে! এখন আসুন পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম এবং কিভাবে কোথায় কোন প্রসেস অবলম্বন করে আপনি পাসপোর্ট ফি প্রদান করবেন এ ব্যাপারে স্পষ্ট ধারনা নেওয়া যাক।
পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার পদ্ধতি | ই পাসপোর্ট ফি প্রদানের মাধ্যম
পাসপোর্ট ফি সাধারণত দুইটি মাধ্যমে বা দুইটি পদ্ধতিতে জমা করা যায়। যথা–
- অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যম এবং
- ব্যাংকিং মাধ্যম।
অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যম: প্রযুক্তির উন্নয়নে বিষয় এখন হাতের মুঠোয়, এটা আমাদের কারণে অজানা নয়। তাই প্রতিটি কাজ এখন ঘরে বসে মানুষ অনলাইন এর মাধ্যমে সম্পাদন করে থাকে। কিন্তু অনেকেই এটা মনে করেন পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার জন্য সরাসরি ব্যাংকে যেতে হয়। কিন্তু আপনি চাইলে অনলাইনে পেমেন্ট করতে পারেন ই পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে।
কেননা ইতিমধ্যে ই পাসপোর্ট ফি প্রদানের জন্য অনলাইন পেমেন্ট সুবিধা চালু করা হয়েছে। এর জন্য আপনাকে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে যেতে হবে অতঃপর পেমেন্ট করতে হবে মোবাইল ব্যাংকিং, ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড কিংবা ইন্টারনেট ব্যাংকিং পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে।
ব্যাংকিং পেমেন্ট মাধ্যম: বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা গুলোতে সচরাচর পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়া হয়। মূলত জমা দেওয়ার সময় নির্ধারিত ফি সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হয় পাশাপাশি জমা দেওয়ার পর একটি চালান রসিক প্রদান করা হয়, যেটা পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হয় পরবর্তী সময়ে।
যাই হোক, আপনি সাধারণত কোন কোন স্টেপ ফলো করে পাসপোর্ট ফি জমা করবেন সেটা জানতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন।
পাসপোর্ট ফি প্রদানের নিয়ম | ই পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম
এখানে দুইটি মাধ্যমে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম খুব সহজভাবে তুলে ধরা হলো। তবে এর পাশাপাশি আপনি যদি পাসপোর্ট সম্পর্কিত আরো কোন খবরাখবর পেতে চান তাহলে Info ক্যাটাগরির অন্যান্য পোস্ট পড়তে পারেন। যেগুলো ইতিমধ্যে আমাদের ওয়েবসাইটে আপনাদের সুবিধার কথা চিন্তা করে প্রকাশ করা হয়েছে।
অনলাইনের মাধ্যমে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম
প্রথমত: একটি নতুন ক্রোম ব্রাউজার ওপেন করুন।
দ্বিতীয়ত: সার্চ করুন পাসপোর্ট অফিস বা ই পাসপোর্ট এমন কিছু লেখে। কিংবা সরাসরি ভিজিট করুন👉www.epassport.gov.bd এই লিংকে।
তৃতীয়ত: আপনার অ্যাকাউন্ট লগইন করুন। যদি কোন অ্যাকাউন্ট না থাকে সেক্ষেত্রে নতুন অ্যাকাউন্ট খুলুন।
চতুর্থত: আবেদন ফরম পূরণ করুন। আর এই আবেদন ফরম পূরণের সময় নির্ধারিত ফি সম্পর্কে তথ্য দিন। পাশাপাশি আপনি কোন ধরনের পাসপোর্ট চাচ্ছেন সেটা নির্বাচন করুন। যেমন– Regular/Express/Super Express.
পঞ্চমত: পেমেন্টের জন্য নির্বাচন করুন Online peyment/e-peyment অপশন। অতঃপর আপনার সুবিধামতো পেমেন্ট গেটওয়ে নির্বাচন করুন। সেটা হতে পারে বিকাশ, নগদ রকেট অথবা ব্যাংক কার্ড।
ষষ্ঠমত: পেমেন্ট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন। আর সফলভাবে পেমেন্ট হলে একটি রশিদ পাবেন, সেটা সংরক্ষণ করে রাখুন।
এমনকি পরবর্তীতে চাইলে পেমেন্ট স্ট্যাটাস চেক করে নিতে পারেন। এর জন্য আপনাকে সরাসরি পাসপোর্ট ওয়েবসাইটে গিয়ে লগইন করে পেমেন্ট স্ট্যাটাস অপশনে যেতে হবে। ব্যাস তাহলেই আপনার কাছে এটা স্পষ্ট হবে যে আপনার পেমেন্ট সফল হয়েছে কিনা। কেননা সেখানে এটা নিশ্চিত করা হয়।
ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম
যদি আপনি ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট এর টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম খুব ভালোভাবে জানতে চান তাহলে এই অংশটুকু আপনার জন্য। সত্যি বলতে ব্যাংকের মাধ্যমে ই পাসপোর্ট ফি প্রদান করা আরো বেশি সহজ। কেননা এক্ষেত্রে আপনাকে কিছুই করতে হবে না। শুধুমাত্র ব্যাংকে যেতে হবে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি যদি ই পাসপোর্ট ফী ব্যাংকের মাধ্যমে জমা দিতে চান তাহলে কোন কোন ব্যাংকে যেতে পারবেন? এখন পর্যন্ত পাঁচটি ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্ট এর ফ্রি বাংলাদেশে প্রদান করা যায়। ওই ব্যাংকগুলোর নাম হচ্ছে–
- ব্যাংক এশিয়া
- ওয়ান ব্যাংক
- ট্রাস্ট ব্যাংক
- ঢাকা ব্যাংক এবং
- প্রিমিয়ার ব্যাংক
অতএব পাসপোর্টের ফি জমা দেওয়ার জন্য আপনাকে এ পাঁচটি ব্যাংকের মধ্যে থেকে যেকোনো একটিতে পৌঁছাতে হবে। তবে আপনার সঙ্গে থাকতে হবে পাসপোর্ট এর আবেদন সামারি ও প্রয়োজনীয় টাকা, যেটা পাসপোর্ট এর ফির জন্য প্রদান করতে হবে। অতঃপর সেখানে গিয়ে একটি ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। যদিও অধিকাংশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা নিজেরাই পাসপোর্ট ফি এর চালান পূরণ করে থাকেন।
তো যাই হোক, অবশ্যই টাকা পরিশোধ করার পর আপনি পাসপোর্ট এর ফি প্রদানের চালান কপি সংগ্রহ করতে ভুলবেন না। কেননা পাসপোর্ট এর জন্য ছবি + ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেওয়ার সময় এই চালান কপি সাথে নিতে হয়। তাই বিষয়গুলো মাথায় রাখুন। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে সাজেস্ট করব বিকাশের মাধ্যমে এ পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার। যেটা সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে আপনাদেরকে জানিয়েছি, মানে অনলাইনের মাধ্যমে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার নিয়ম অনুসরণের কথা বলছি।
পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার সময় সাধারণ সমস্যা ও সমাধান
সাধারণত পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার সময় কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন ধরুন– ব্যাংকের মাধ্যমে পাসপোর্টের টাকা জমা দেওয়ার জন্য ব্যাংকে গিয়ে লম্বা লাইনে দাঁড়ানো। অথবা ঘরে বসে অনলাইনের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে গিয়ে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমের সমস্যা কিংবা চালান হারিয়ে ফেলা।
আপনি যদি এই সমস্যাগুলোর সমাধান চান তাহলে প্রথম সমস্যার জন্য সমাধানের উপায় হলো – পাসপোর্ট এর টাকা জমা দেওয়ার জন্য অনলাইন মাধ্যম বেছে নেওয়া। আর দ্বিতীয় সমস্যার সমাধান হলো, ইন্টারনেট সংযোগ চেক করা অথবা যেকোনো সমস্যার সমাধানের তাগিদে পাসপোর্ট অফিসের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করা। আর তৃতীয় সমস্যার সমাধান হচ্ছে চালান জমা দেওয়ার পর সেটির কপি সঙ্গে সঙ্গে রেখে দেওয়া। ব্যাস আশা করছি এই সমস্যাগুলো থেকে আপনি পরিত্রাণ পাবেন।
তো পাঠক বন্ধুরা, এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। পরবর্তীতে আবারো নতুন টপিকের নতুন কোন আলোচনা নিয়ে কথা হবে। সবাইকে জানাই আল্লাহ হাফেজ। আর হ্যাঁ, সবশেষে জেনে নিন পাসপোর্ট নিয়ে জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন ও সেগুলোর উত্তর সমূহ।
FAQs:
১. পাসপোর্টের ফি কোথায় জমা দেওয়া যায়?
✓ পাসপোর্টের ফি সোনালী ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত শাখায় জমা দেওয়া যায়। ই-পাসপোর্টের ক্ষেত্রে অনলাইনেও পেমেন্ট করা যায়।
২. পাসপোর্টের ফি কত দিন আগে জমা দিতে হয়?
✓ পাসপোর্ট ফি আবেদন ফর্ম জমা দেওয়ার আগে পরিশোধ করতে হয়।
৩. ফি জমা দেওয়ার পর কি চালান জমা দিতে হয়?
✓ হ্যাঁ, ফি জমা দেওয়ার চালান পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হয়।
৪. ই-পাসপোর্টে কি অতিরিক্ত ফি লাগে?
✓ ই-পাসপোর্টের জন্য ফি নির্ধারিত থাকে এবং প্রসেসিং টাইম অনুযায়ী ফি ভিন্ন হয়।
৫. ফি জমা দেওয়ার রশিদ হারালে কী করব?
✓ ব্যাংক বা পাসপোর্ট অফিস থেকে নতুন রশিদ সংগ্রহের জন্য আবেদন করতে হবে।
৬. অনলাইনে ফি জমা দেওয়ার সুবিধা কী?
✓ অনলাইনে ফি জমা দেওয়া দ্রুত এবং সহজ। ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হয় না।