পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার নিয়ম নিয়ে আমাদের আজকের আলোচনা। এটা আমরা সবাই জানি- পাসপোর্টে নামের ভুল সংশোধন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এটি আন্তর্জাতিক ভ্রমণের জন্য একটি জরুরী নথিপত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। তাই এতে যদি কোন ভুল তথ্য থেকে থাকে তাহলে পরবর্তীতে সমস্যার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে। তাই পূর্বেই সমাধান করে নেওয়া সর্বোত্তম।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে– পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার সুনির্দিষ্ট নিয়ম কি? আর পাসপোর্টে যদি কোন ভুল থাকে তাহলে সংশোধন করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় নথিপত্র হিসেবে কি কি সংগ্রহ করার প্রয়োজন পড়বে? পাসপোর্ট এর নাম সংশোধনের জন্য পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগের পদ্ধতি কি এবং সংশোধনের জন্য আবেদন ফরম পূরণ করার নির্দেশনা কি? প্রত্যেকটি প্রশ্নের উত্তর থাকছে আমাদের আজকের এই নিবন্ধনে। তাই শেষ পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নিন।
পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার নিয়ম
পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার জন্য বা যেকোনো তথ্য পরিবর্তন করার জন্য আপনাকে সংগ্রহ করতে হবে আবেদন ফরম। সাধারণত, পাসপোর্টের যদি মেয়াদ শেষ হয়ে যায় অথবা তথ্য সংশোধন করার প্রয়োজন পড়ে, সেটা হতে পারে নিজের নাম, স্বামী/স্ত্রী এর নাম, পিতা মাতার নাম। তাছাড়া ছবি পরিবর্তন, নতুন তথ্য যোগ করা যেমন শিশু বা স্ত্রী কিংবা স্বামীর নাম অথবা পাসপোর্ট হারানো বা নষ্ট হয়ে যাওয়া এড়াতে প্রয়োজন হয় রি ইস্যু, তথ্য পরিবর্তন বা পাসপোর্ট সংশোধনের।
তো যাই হোক এক্ষেত্রে করণীয় কাজ হচ্ছে “ পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য নতুন আবেদন ফরমটি ই পাসপোর্ট বা এমআরপি অফিস থেকে সংগ্রহ করা”। কেননা পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার নিয়ম হচ্ছে প্রথম অবস্থায় নতুন ভাবে আবেদন ফরম সংগ্রহ করা অতঃপর সেটা পূরণ করে সঠিক তথ্য বসিয়ে তা স্বাক্ষরিত করে নেওয়া। এখন আসুন জেনে নেই পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার জন্য কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন হতে পারে বা কোন কোন সংশ্লিষ্ট প্রমাণপত্র সংযুক্ত করা লাগতে পারে!
পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট
পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার নিয়ম কি সেটা আমরা জেনেছি। কিন্তু এক্ষেত্রে আপনার যে সকল কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে সেগুলো হলো-
- জন্ম নিবন্ধন সনদ পত্র অথবা জাতীয় পরিচয় পত্র
- শিক্ষাগত সনদপত্র
- আদালতের ঘোষণাপত্র
- প্রয়োজনীয় সংশোধনের জন্য সমর্থনযোগ্য কাগজপত্র
- পুরাতন পাসপোর্ট এর মূল কপি ও ফটোকপি
- আবেদন ফরম পূরণ করার মূল কাগজ
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও সদ্য তোলা ছবি।
পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার আবেদন ফরম
পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার জন্য আবেদন ফরম এর বিষয়ে যদি আপনি বিস্তারিত জানতে চান তাহলে পাসপোর্টে স্ত্রী বা স্বামীর নাম সংযোজন বা সংশোধনের নিয়ম.pdf ডাউনলোড করে দেখে নিন । অথবা নতুন ক্রোম ব্রাউজার নিয়ে সার্চ করতে পারেন এমন কিছু কিওয়ার্ড লিখে। যেখানে আপনাকে সাজেস্ট করা হবে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে কিছু ওয়েবসাইট।
যেমন ধরুন আপনি যদি নড়াইলের বাসিন্দা হয়ে থাকেন তাহলে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নড়াইলে গিয়ে আবেদন ফরম সংগ্রহ করবেন অতঃপর সেটা পূরণ করবেন। কিন্তু যদি অনলাইনের মাধ্যমে আরো বিস্তারিত জানতে চান তাহলে সে ক্ষেত্রে ভিজিট করতে পারেন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নড়াইলের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে। যার লিংক 👉- click here.
সাধারণত পাসপোর্ট রি ইস্যু অথবা যেকোনো তথ্য পরিবর্তন ও সংশোধনের জন্য যে সকল জিনিসের প্রয়োজন পড়ে এবং আবেদন ফরম যে পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা যায় সেটা আরো ভালোভাবে বুঝতে আপনি নিচের দেওয়া ইমেজটি ভালোভাবে লক্ষ্য করুন।
আরও দেখুনঃ ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
পাসপোর্টে নাম সংশোধনের যোগ্যতা
অনেকেই এমন কিছু কুয়েরি লিখে সার্চ করে থাকেন। যে– পাসপোর্টে নাম সংশোধনের যোগ্যতা কি বা পাসপোর্ট এর কোন কিছু সংশোধনের জন্য সাধারণত কি কি কারণ থাকতে হবে! সত্যি বলতে আপনি যদি পাসপোর্ট রিনিউ করতে চান কিংবা কোন ভুল সংশোধন করতে চান তাহলে উপযুক্ত প্রমাণ পত্র প্রদান করতে হবে এবং নাম পরিবর্তনের যৌক্তিক কারণ জানাতে হবে তাদেরকে।
যেমন– পাসপোর্ট তৈরির সময় তথ্যের অসঙ্গতি, ধর্মান্তরের কারণে নামের পরিবর্তন কিংবা বিবাহ বা তালাকের কারণে নাম পরিবর্তন। তবে সেটা যাই হোক অবশ্যই নতুন নাম এবং পুরাতন নামের মধ্যে সংযোগ থাকতে হবে এক্ষেত্রে এমনকি স্কুল কলেজ বা কর্মক্ষেত্রের নথির সঙ্গে তথ্যের সামঞ্জস্য থাকা গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি এই অংশটুকু পড়ার মাধ্যমে আপনার প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর মিলেছে।
পাসপোর্ট সংশোধন অঙ্গীকারনামা | পাসপোর্ট নাম সংশোধন হলফনামা | পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগের পদ্ধতি কি?
অনেকেই রয়েছেন যারা এতোটুকুও বোঝেন না যে পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগের ঠিক পদ্ধতি কি। যারা এ বিষয়ে নতুন তাদের না বোঝারই কথা। এজন্য আলোচনার এ পর্যায়ে কিছু পরামর্শ দিচ্ছি।
আপনি যদি পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করতে চান তাহলে মূলত বিভিন্ন পদ্ধতি আপনার হাতে রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ কিছু পদ্ধতি হচ্ছে–
- সরাসরি অফিসে যোগাযোগ করা
- টেলিফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা
- ইমেইলের মাধ্যমে তাদের সাথে কন্টাক্ট করা
- অনলাইন পোর্টাল থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা
- ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের সাথে আলোচনা করা অথবা
- চিঠি পাঠানো।
কেননা – প্রতিটি জেলা ও বিভাগীয় শহরে পাসপোর্ট অফিস রয়েছে। অতএব আপনি যে জেলার বাসিন্দাই হয়ে থাকুন না কেন, আপনি যদি একটু খোঁজ খবর নেন তাহলে সরাসরি পাসপোর্ট অফিসের ঠিকানা সংগ্রহ করে সেখানে উপস্থিত হয়ে আপনার আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে পারবেন বা যেকোনো প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে ফেলতে পারবেন সেখান থেকে। যেমন কেন্দ্রীয় পাসপোর্ট অফিস এর ঠিকানা হলো – ঢাকা সদর দপ্তর: ঠিকানা: আগারগাঁও, ঢাকা-১২০৭। সময়সীমা: সকাল ৯:০০ থেকে বিকাল ৫:০০ (কর্মদিবসে)।
এছাড়াও পাসপোর্ট অফিসের হেল্পলাইন নম্বর হচ্ছে ৮৮০৯৬৬৬৭৭৮৮৮, তবে এই নম্বর আপনি পাসপোর্ট অফিসের নির্দিষ্ট শাখার ফোন নম্বর তাদের ওয়েবসাইট থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়াও পাসপোর্ট অফিসের নির্ধারিত ইমেইল সংগ্রহ করে তাদেরকে মেইল পাঠিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন এখনই। তবে হ্যাঁ, পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগের আগে অবশ্যই মাথায় রাখবেন, তা হলো – সবসময় সঠিক ও প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রদান করা এবং অফিস সময়ের মধ্যে তাদের সাথে কন্টাক্ট করার চেষ্টা করা পাশাপাশি যখন তাদের সঙ্গে কথা বলবেন তখন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আবেদন নম্বর সঙ্গে রাখা।
আর হ্যাঁ, পাসপোর্ট সংশোধন অঙ্গীকারনামা নিয়ে জানতে চান অনেক অডিয়েন্সরা। কেননা পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য একটি অঙ্গীকারনামা জমা দেওয়ার প্রয়োজন হয় কখনো কখনো। এটি সাধারণত নাম জন্ম তারিখ বা অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য সংশোধনের জন্য আদালতের মাধ্যমে প্রস্তুত করা একটি ডকুমেন্ট, যেটা আপনার তথ্য পরিবর্তনের বৈধতার নিশ্চিত করে থাকে। তো এই অঙ্গীকারনামা প্রস্তুত করার জন্য আপনার পেশাদার আইনজীবির সহযোগিতা নিতে হবে।
যদি বলেন কিভাবে বা অঙ্গীকারনামাটা ঠিক কেমন হবে তাহলে বলব, এখানে খুবই সাধারণ কিছু বিষয় উল্লেখ করা থাকবে এবং পেশাদার আইনজীবির মাধ্যমে ওই কাগজটি আইনে দলিল হিসেবে বৈধতা দিয়ে দেওয়া হবে আপনাকে। কাগজে সাধারণত যা যা লেখা থাকতে পারে সেগুলো হলো –
অঙ্গীকারনামা আমি, [আপনার নাম], পিতা/মাতা: [পিতার নাম], ঠিকানা: [বর্তমান ঠিকানা], অঙ্গীকার করছি যে, আমার পাসপোর্ট নম্বর [XXXXXX]-এ উল্লেখিত তথ্য সংশোধন করার জন্য আমি এই অঙ্গীকারনামা প্রদান করছি। সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য: ১. পূর্বের তথ্য: [ভুল তথ্য] ২. সংশোধিত তথ্য: [সঠিক তথ্য] আমি নিশ্চিত করছি যে এই তথ্য সঠিক এবং কোনো প্রকার ভুল তথ্য প্রদান করিনি। স্বাক্ষর: [আপনার স্বাক্ষর] তারিখ: [তারিখ] |
পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার নিয়মের বিষয়ে প্রশ্ন ও উত্তর
১. অনলাইনে পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার পদ্ধতি কি?
✓আপনি যদি সরাসরি পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কেন্দ্রীয় শাখায় না যেতে চান সেক্ষেত্রে অনলাইনে পাসপোর্ট এর নাম সংশোধন করার জন্য বাংলাদেশের পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এরপর আপনার একাউন্টে লগইন করে সংশোধনের জন্য আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। সংশোধনের জন্য আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে service for existing passport এই অপশনটি। অতঃপর প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন সঠিকভাবে পূরণ করে পাসপোর্ট সংশোধনের ফ্রি প্রদান করে আবেদন জমা দিতে হবে। ব্যাস এতোটুকুই। পরবর্তীতে কিছু সময় পর আপনাকে নতুন পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য জানান দেওয়া হবে মানে আপনি সংশোধিত পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
২. সংশোধনের পর পাসপোর্ট গ্রহণের পদ্ধতি কি?
✓ পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য যখন আপনি সেটা সাবমিট করবেন তো পরবর্তী সময়ে আপনাকে ট্রাকিং নম্বর ব্যবহার করে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে আবেদনটির অবস্থা জানতে হবে। যদি পাসপোর্ট আপনার জন্য রেডি থাকে তাহলে রেডি ফর ডেলিভারি এমন লেখা সাজেস্ট করা হবে আপনাকে। অতঃপর আপনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সংশোধিত পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। এ ব্যাপারে আরো ভালোভাবে জানতে হলে আপনি নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে কথা বলতে পারেন বা অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে এ বিষয়ে জানতে পারেন খুঁটিনাটি।
৩. পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার জন্য কত টাকার প্রয়োজন পড়ে?
✓ পাসপোর্টে নাম সংশোধন করার জন্য আপনাকে নতুন পাসপোর্ট তৈরির জন্য যে টাকা পে করতে হয়েছিল ঠিক একই অ্যামাউন্টের টাকা প্রদানের প্রয়োজন পড়বে। তো যদি এ বিষয়ে বিস্তারিত না জানা থাকে তাহলে আপনি পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে এ সম্পর্কিত আরো একটি আর্টিকেল আমাদের ওয়েবসাইট থেকে এখনই পড়ে ফেলতে পারেন।
তো পাঠক বন্ধুরা, এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা। পাসপোর্টে নাম সংশোধন নিয়ে যদি আরও কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট করতে পারেন। পাসপোর্ট সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।