৬ বছরের নিচে বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ও পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে দেখুন

E-Passport for a Child

আমরা সবাই জানি- ভ্রমণ, পড়াশোনা বা চিকিৎসার প্রয়োজনে দেশের বাইরে যেতে লাগে ই পাসপোর্ট। আর এটা শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে নয় শিশুদের ক্ষেত্রেও প্রয়োজন। এজন্য অনেকেই জানতে চান- ৬ বছরের নিচে বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ও পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন সম্পর্কে। 

কেননা অনেকের ধারণা- প্রাপ্তবয়স্কদের পাসপোর্ট এর নিয়ম এবং বাচ্চাদের পাসপোর্ট এর নিয়ম আলাদা। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা ধাপে ধাপে দেখব, শিশুদের ই -পাসপোর্ট করার নিয়ম, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, খরচ, মেয়াদ, সাধারণ ভুল ত্রুটি ও সমাধান সহ আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে  খুঁটিনাটি। 

৬ বছরের নিচে বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট করার নিয়ম 

১১৯ তম দেশ হিসেবে ২০২০ সালের দিকে বাংলাদেশ ই পাসপোর্ট অর্থাৎ ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট কার্যক্রমের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হয়। আর তখন থেকেই সব বয়সের নাগরিকের জন্য এই পাসপোর্ট এর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। আপনি যদি ছয় বছরের নিচে আপনার বাচ্চা শিশুর জন্য ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট করতে চান তাহলে–

অনলাইনে ধাপে ধাপে কয়েকটি কার্যপ্রক্রিয়া সম্পাদনের মাধ্যমে আবেদন কার্য সম্পন্ন করতে পারবেন।  কিন্তু এর জন্য আপনাকে জানতে হবে– শিশুদের ই পাসপোর্ট এর জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কি কি, পাসপোর্ট ফি কত টাকা এবং আনুষঙ্গিক আরো কিছু তথ্য। 

পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে | শিশুদের ই পাসপোর্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 

শিশুদের পাসপোর্ট করার জন্য মূল কাগজপত্র এবং অতিরিক্ত প্রয়োজন হিসেবে যে সকল ডকুমেন্ট সঙ্গে রাখবেন সেগুলো হলো –

  • শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ 
  • মা ও বাবার এনআইডি কপি 
  • পিতা-মাতার পাসপোর্ট (যদি থেকে থাকে)
  • শিশুর ছবি 
  • আর অতিরিক্ত প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট হিসেবে লাগতে পারে মৃত্যু সনদ, যদি অভিভাবক না থাকে উক্ত শিশুর। আবার কখনো কখনো দত্তক সনদেরও প্রয়োজন পড়ে। যদি বর্তমান অভিভাবকরা শিশুটিকে দত্তক নিয়ে থাকেন। 

যাই হোক, এখন দেখুন শিশুদের ই পাসপোর্ট এর জন্য কিভাবে অনলাইনে আবেদন করবেন। তবে আপনি চাইলে এর পাশাপাশি আরও জানতে ই পাসপোর্ট আবেদনের পূর্ব প্রস্তুতি এবং ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন ফরম পিডিএফ সম্পর্কিত আরো দুটি পোস্টে চোখ বোলাতে পারেন। 

অনলাইনে ৬ বছরের নিচে বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ধাপে ধাপে

প্রথমত: পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে ই পাসপোর্ট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ভিজিট করুন। ওয়েবসাইট লিংক-  www.epassport.gov.bd

E-Passport for a Child

দ্বিতীয়ত: ওয়েবসাইটে প্রবেশের পর নতুন অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করুন। এজন্য আপনাকে ক্লিক করতে হবে রেজিস্ট্রেশন অথবা সাইন আপ এই অপশনে। 

তৃতীয়ত: অনলাইন এপ্লাই” এই অপশনে গিয়ে আবেদন ফরম পূরণ করুন। এ সময় শিশুর নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান এবং পিতা-মাতার তথ্য বসাতে হবে। অবশ্যই ইনফরমেশন গুলো সঠিক ভাবে বসাবেন। 

E-Passport for a Child

 

চতুর্থত: ছবি ও সিগনেচার সংক্রান্ত নিয়ম অনুযায়ী চতুর্থ ধাপ পার করতে হবে। সাধারণত ৬ বছরের নিচে শিশুদের সিগনেচার দিতে হয় না আর ছবি সাধারণত পাসপোর্ট অফিসে তোলা হয়ে থাকে। 

E-Passport for a Child

তবে আপনি যদি অনলাইনে শিশুদের ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করেন তাহলে প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন প্রদান করে সরাসরি ক্লিক করবেন কন্টিনিউ অথবা সাবমিট এই অপশনে। 

পরবর্তীতে আপনার কাজ হবে নির্বাচিত ডেলিভারি টাইপ অনুযায়ী অনলাইনে বা ব্যাংকের মাধ্যমে ই-পাসপোর্ট এর জন্য নির্ধারিত ফি জমা করা এবং নির্ধারিত তারিখ ও সময় অনুযায়ী পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করা। 

তবে আপনি যদি ঘরে বসে পাসপোর্টের টাকা প্রদান করতে চান সে ক্ষেত্রে পাসপোর্ট ফি বিকাশ করার নিয়ম  সম্পর্কিত আর্টিকেলটি পড়তে পারেন। যাইতোমধ্যে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি। 

আর হ্যাঁ, অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া সম্পাদন শেষে অবশ্যই উক্ত কপি ফাইলটি প্রিন্ট করে ডাউনলোড করে রাখবেন। আবেদন প্রক্রিয়া, পেমেন্ট প্রদান করার পরবর্তীতে সাধারণত বায়োমেট্রিক নেওয়া হয়। কিন্তু অনূর্ধ্ব ছয় বছর বয়সী শিশুর ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নদীসহ আবেদনপত্র জমা নিয়ে ই পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ দেয়া হয়ে থাকে। কেননা ছয় বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের বায়োমেট্রিক নেওয়া সম্ভব হয় না।  

এখন আসুন জেনে নেই, শিশুদের ই পাসপোর্ট করতে মোটামুটি কত দিন সময় লাগে, টোটাল কত টাকা খরচ পড়ে এবং জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে। 

আরো দেখুন- ই পাসপোর্ট আবেদন বাতিল করার নিয়ম.

১. ছয় বছরের নিচে বাচ্চা শিশুদের জন্য ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা খরচ পড়ে?

✓ ছয় বছরের নিচে বাচ্চা শিশুদের জন্য বাংলাদেশে পাঁচ বছর মেয়াদে ৪৮ পেজের ই পাসপোর্ট এর জন্য খরচ পরে ৪,০২৫ টাকা। মূলত বড়দের ক্ষেত্রে পাসপোর্ট ফি হিসেবে যে পরিমাণ টাকা প্রদান করতে হয় ছোটদের ক্ষেত্রেও টাকার পরিমাণ একই। ১০ বছর মেয়াদী পাসপোর্ট ফি সম্পর্কে জানতে সাজেস্টকৃত লিংকে ক্লিক করতে পারেন। 

২. শিশুদের ই পাসপোর্ট করতে কতদিন সময় লাগে? 

✓ বাচ্চা শিশুদের অর্থাৎ 6 বছরের নিচে বয়সী শিশুদের জন্য ই পাসপোর্ট করতে সাধারণত ১০ থেকে ২১ কর্মদিবস পর্যন্ত সময় লাগে। পাসপোর্ট তৈরির রেগুলার প্রসেস প্রায় একুশ কর্মদিবস। আর এক্সপ্রেস প্রসেস হচ্ছে 10 কর্ম দিবস এবং সুপার এক্সপ্রেস প্রসেস দুই থেকে পাঁচ কর্ম দিবস। এক্ষেত্রে টাকার পরিমান কম বেশি হয়ে থাকে। আপনি মূলত শিশুদের ই পাসপোর্ট ফি প্রদান করার সময় এই বিষয়টির সাথে পরিচিত হবেন। 

৪. ছয় বছরের নিচে বয়সি শিশুদের পাসপোর্ট করার সময় শিশুর ফিঙ্গারপ্রিন্ট লাগবে কি? 

✓ না ছোট শিশুদের পাসপোর্ট করার সময় সাধারণত ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর ছাপ নেওয়া হয় না। তাই এটির প্রয়োজন নেই। 

৫. কত বছর বয়স থেকে এই পাসপোর্ট করার সময় সিগনেচার দিতে হয়? 

✓ বাচ্চা শিশুদের বয়স যদি ছয় বছরের বেশি হয় সেক্ষেত্রে সিগনেচার দেওয়া বাধ্যতামূলক। এমনটাই নিয়ম করা রয়েছে। 

৬. বিদেশে থাকা অবস্থায় শিশুদের পাসপোর্ট কিভাবে করতে হয়? 

✓ বিদেশে থাকা অবস্থায় শিশুদের পাসপোর্ট করতে বাংলাদেশ ও দূতাবাস বা হাইকমিশনের মাধ্যম অবলম্বন করতে হয়। 

৭. শিশুদের ই পাসপোর্ট করার আগে করণীয় কি 

✓ শিশুর জন্য ই পাসপোর্ট করার আগে একজন অভিভাবকের করণীয় কাজগুলো হলো –

জন্ম নিবন্ধন আগে থেকেই সঠিকভাবে করে রাখা ভালোভাবে চেক করা নামের বানান এবং বাবা-মায়ের এনআইডি সাথে সম্পূর্ণ তথ্য মিল রয়েছে কিনা লক্ষ রাখা। অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণের সময় ভুল এড়িয়ে চলা এবং অ্যাপোয়েন্টমেন্ট এর দিনে সময় মত উক্ত পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত থাকা। 

আমাদের শেষ কথা: বড়দের এবং ছোটদের পাসপোর্ট আবেদন এবং পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার নিয়ম মূলত একই। তাই এটা বলতেই পারি শিশুর ই পাসপোর্ট এখন খুব সহজে করা যায়। এর জন্য আপনাকে ধাপে ধাপে শুধুমাত্র কয়েকটি কাজ সম্পাদন করতে হবে এবং ঝামেলা এড়াতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখতে হবে এবং অনলাইনে সঠিক ভাবে আবেদন করতে হবে। যদি পাসপোর্ট সম্পর্কে আরো কিছু জানার থাকে প্রশ্ন করতে পারেন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।

About Author

Setu Rani
Setu Rani is a professional blogger with expertise in passport and visa information. With a passion for travel, she shares insightful guides on international visa processes, passport services, and travel experiences. Her in-depth knowledge helps travelers navigate complex documentation with ease. When she's not writing, Setu explores new destinations and documents her journeys to inspire others.
পাসপোর্ট সংশোধন করতে কি কি লাগে এবং ই পাসপোর্ট সংশোধন ফি
Passport

জানুন পাসপোর্ট সংশোধন করতে কি কি লাগে এবং ই পাসপোর্ট সংশোধন ফি সম্পর্কে

পাসপোর্ট সংশোধন বলতে সাধারণত আপনার পাসপোর্টে ছাপা তথ্যগুলোর মধ্যে যেকোন ভুল, অসামঞ্জস্য বা অপরিবর্তনীয় তথ্যকে...

E-Passport for a Child
Passport

৬ বছরের নিচে বাচ্চাদের ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ও পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে দেখুন

আমরা সবাই জানি- ভ্রমণ, পড়াশোনা বা চিকিৎসার প্রয়োজনে দেশের বাইরে যেতে লাগে ই পাসপোর্ট। আর...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *