পাসপোর্ট করার নাম শুনলেই অনেকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম জমা দেওয়া, আর পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়া ঝামেলা মনে করে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। কিন্তু আপনাদের জন্য দারুণ খবর! এখন আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার দিন শেষ। সরকারের ডিজিটাল সুবিধার কারণে আপনি আপনার মোবাইল ফোন ব্যবহার করেই খুব সহজে পাসপোর্ট ফি বিকাশ করতে পারবেন।
আসুন, এই আর্টিকেলে আমরা ধাপে ধাপে জেনে নিই কিভাবে আপনি ঘরে বসেই আপনার ই-পাসপোর্টের পেমেন্ট বিকাশের মাধ্যমে দ্রুত এবং নিরাপদে সম্পন্ন করবেন। সাথে পাসপোর্ট ফি জামা করার বিষয়ে আরো বিস্তারিত।
কেন বিকাশ দিয়ে পাসপোর্ট ফি জমা দেবেন?
আপনি হয়তো ভাবছেন, ব্যাংকে জমা দেওয়াই তো সহজ। কিন্তু এর কিছু সুবিধা জানলে আপনিও এখন থেকে বিকাশ ব্যবহার করবেন। নিজের পয়েন্টগুলো এক নজরে দেখুন অতঃপর পাসপোর্ট ফি বিকাশ করার সহজ উপায় জেনে আছে পেমেন্ট করুন আপনার নির্ধারিত ফি।
✓সময় সাশ্রয়: ব্যাংকে যাওয়া-আসা এবং লাইনে দাঁড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই। কয়েক মিনিটের মধ্যেই পেমেন্ট হয়ে যায়।
✓সুবিধা: দিনের যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে আপনি পেমেন্ট করতে পারবেন। এমনকি রাত ২টা বাজেও!
✓নিরাপত্তা: বিকাশের পেমেন্ট পদ্ধতি বেশ সুরক্ষিত। পেমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথেই ডিজিটাল রসিদ পেয়ে যান।
✓ভুল হওয়ার সম্ভাবনা কম: সরাসরি সিস্টেমে পেমেন্ট হওয়ায় ফি-এর পরিমাণে ভুল হওয়ার সুযোগ থাকে না।
পাসপোর্ট ফি জমা দেওয়ার উপায়
আপনার ই-পাসপোর্টের ফি আপনি প্রধানত দুইটি উপায়ে জমা দিতে পারবেন:
১. অনলাইনে ডিজিটাল পেমেন্ট (সবচেয়ে সেরা উপায়)
এই পদ্ধতিতে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে টাকা জমা দেন। এর মধ্যে রয়েছে:
- মোবাইল ব্যাংকিং: যেমন বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি। এটিই এখন সবচেয়ে জনপ্রিয়।
- কার্ড পেমেন্ট: আপনার ডেবিট কার্ড (যেমন ভিসা, মাস্টারকার্ড) বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে।
- ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার: কয়েকটি নির্দিষ্ট ব্যাংকের অনলাইন ব্যাংকিং-এর মাধ্যমে।
২. অফলাইন পেমেন্ট (প্রচলিত পদ্ধতি)
এই পদ্ধতিতে আপনাকে সরাসরি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে টাকা জমা দিতে হয়। বাংলাদেশে সাধারণত সোনালী ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখায় গিয়ে চালানের মাধ্যমে এই ফি জমা দিতে হয়। তবে এই প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ এবং অনেক সময় ভিড় থাকে।
আপনি যদি ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চান, তাহলে নিঃসন্দেহে পাসপোর্ট ফি বিকাশ পেমেন্ট পদ্ধতিটি বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
পাসপোর্ট ফি বিকাশ করার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া (ধাপে ধাপে)
বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট করার আগে একটি কথা অবশ্যই মনে রাখবেন: আপনাকে কিন্তু আগে ই-পাসপোর্টের অনলাইন আবেদন সম্পন্ন করতে হবে। আবেদন শেষ হলে আপনাকে একটি অ্যাপ্লিকেশন আইডি (Application ID) দেওয়া হবে। এই আইডি ছাড়া কিন্তু ফি জমা দেওয়া যাবে না।
অ্যাপ্লিকেশন আইডি হাতে থাকলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন: কেন না এটাই হচ্ছে পাসপোর্ট ফি বিকাশ করার নিয়ম যা একদমই সহজ, সম্পন্ন করে ফেলতে পারবেন মাত্র দুই মিনিটে।
ধাপ ১: পেমেন্টের জন্য ওয়েবসাইটে যান
প্রথমে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারের ইন্টারনেট ব্রাউজার থেকে ই-পাসপোর্টের অফিসিয়াল পেমেন্ট পোর্টাল -এ প্রবেশ করুন অথবা ক্লিক করুন (Click here) এই লিংকে।

ধাপ ২: ‘ফি জমা দিন’ (Pay Fees) অপশন খুঁজুন
ওয়েবসাইটের মেনু বা কোনো অংশে ‘ফি জমা দিন’ বা ‘Pay Fees’ বা Passport Fee নামে একটি অপশন পাবেন। সেটিতে ক্লিক করুন। সাধারণত পেমেন্ট করার জন্য আলাদা একটি লিঙ্ক দেওয়া থাকে।
ধাপ ৩: আপনার তথ্য পূরণ করুন
এই ধাপে আপনার কাছ থেকে কিছু জরুরি তথ্য চাওয়া হবে। এগুলো খুব সাবধানে পূরণ করবেন:

ছবিতে দেখানো তথ্য ছাড়াও কখনও কখনও আরও ইনফরমেশন চাওয়া হতে পারে। যেমনঃ
- অ্যাপ্লিকেশন আইডি (Application ID): আপনার অনলাইন আবেদন শেষে যে আইডি পেয়েছেন, সেটি এখানে হুবহু লিখুন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (NID) / জন্ম নিবন্ধন নম্বর (BRN): আপনি আবেদন করার সময় যে আইডি ব্যবহার করেছেন, সেটি দিন।
- জন্ম তারিখ: আবেদনপত্রে দেওয়া আপনার জন্ম তারিখটি এখানে দিন।
- পাসপোর্টের ধরন (Type of Passport): ই-পাসপোর্ট সিলেক্ট করুন।
- ডেলিভারি টাইপ: আপনি Regular (সাধারণ) নাকি Express (জরুরী) ডেলিভারি চান, সেটা নির্বাচন করুন। ডেলিভারি টাইপ অনুযায়ী কিন্তু ফি এর পরিমাণ কম-বেশি হয়।
সব তথ্য ঠিকভাবে পূরণ করলে, সিস্টেম আপনাকে দেখিয়ে দেবে যে আপনাকে মোট কত টাকা ফি জমা দিতে হবে।
ধাপ ৪: পেমেন্ট গেটওয়েতে বিকাশ নির্বাচন করুন
ফি এর পরিমাণ দেখে যদি আপনার দেওয়া তথ্যের সাথে সবকিছু ঠিক থাকে, তাহলে পেমেন্ট অপশনগুলোর মধ্য থেকে bKash (বিকাশ) অপশনটি নির্বাচন করুন। এরপর ‘পেমেন্ট সম্পন্ন করুন’ বা ‘Proceed to Payment’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫: বিকাশ পেমেন্ট শেষ করুন
এই ধাপে আপনি সরাসরি বিকাশের পেমেন্ট স্ক্রিনে চলে আসবেন।
- প্রথমে আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্ট নম্বরটি দিন।
- আপনার মোবাইলে একটি ভেরিফিকেশন কোড (OTP) আসবে। সেই কোডটি নির্দিষ্ট বক্সে বসান।
- সবশেষে, আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টের পিন নম্বর (PIN) প্রবেশ করান।
পেমেন্ট সফলভাবে সম্পন্ন হলে আপনি একটি অনলাইন পেমেন্ট রসিদ বা চালান পাবেন।
ধাপ ৬: রসিদটি ডাউনলোড ও প্রিন্ট করুন
পেমেন্ট সফল হওয়ার পর স্ক্রিনে আসা ডিজিটাল রসিদটি অবশ্যই ডাউনলোড করে নিন। সম্ভব হলে এটির একটি বা দুটি রঙিন প্রিন্ট কপি বের করে নিন। এই রসিদটি আপনার পাসপোর্ট আবেদনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়ার সময় এটি প্রয়োজন হবে।
পাসপোর্ট ফি নিয়ে কিছু জরুরি তথ্য
পাসপোর্ট ফি এর পরিমাণ কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে:
| ফি-এর ধরন | সাধারণ ডেলিভারি (Regular) | জরুরী ডেলিভারি (Express) |
| ৪৮ পাতার ৫ বছর মেয়াদি | ৪,০২৫ টাকা | ৬,৩২৫ টাকা |
| ৪৮ পাতার ১০ বছর মেয়াদি | ৫,৭৫০ টাকা | ৮,০৫০ টাকা |
| ৬৪ পাতার ৫ বছর মেয়াদি | ৬,৩২৫ টাকা | ৮,৬২৫ টাকা |
| ৬৪ পাতার ১০ বছর মেয়াদি | ৮,০৫০ টাকা | ১০,৩৫০ টাকা |
উপরের এই ফি-এর সাথে ১,০০০ টাকা অতিরিক্ত যোগ হবে যদি আপনি অত্যন্ত জরুরী (Super Express) ডেলিভারি চান (তবে এটি সবার জন্য প্রযোজ্য নয়)। সব ফি এর সাথে অনলাইন চার্জ যোগ হতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা
১. টাকা কেটে নিলে রসিদ না পেলে কী করবেন?
যদি আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেয় কিন্তু আপনি রসিদ পাননি, তাহলে সাথে সাথে পেমেন্ট পেজ থেকে বের হবেন না। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। যদি ২০-৩০ মিনিটের মধ্যেও রসিদ না আসে, তবে আপনার বিকাশ হেল্পলাইনে যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে একটি ট্রানজেকশন আইডি (Transaction ID) দেবে। এই আইডি ব্যবহার করে ই-পাসপোর্ট পোর্টালে ‘পেমেন্ট ভেরিফিকেশন’ অপশনে গিয়ে আপনার রসিদটি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
তথ্য যাচাই করুন: পাসপোর্ট ফি বিকাশ করার সময় পেমেন্ট করার আগে আপনার নাম, আবেদন আইডি এবং টাকার পরিমাণ সবকিছু ঠিক আছে কিনা, তা কমপক্ষে দু’বার মিলিয়ে নেবেন। ভুল তথ্য দিলে টাকা অন্য আইডিতে চলে যেতে পারে।
সর্বদা অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন: পেমেন্ট করার জন্য epassport.gov.bd – এর মতো সরকারি এবং অফিসিয়াল লিঙ্ক ছাড়া অন্য কোনো সন্দেহজনক লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।
আমাদের শেষ কথাঃ ঘরে বসে, নিরাপদে এবং দ্রুত পাসপোর্ট ফি বিকাশ করার নিয়ম কিন্তু খুবই সহজ। একবার চেষ্টা করলেই আপনি বুঝতে পারবেন যে এটি ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়ানোর চেয়ে কত বেশি সুবিধাজনক। এই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করুন। পাসপোর্ট বা বিকাশের পেমেন্ট নিয়ে আপনার যদি আর কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে জানাতে পারেন।