শিল্প শব্দের অর্থ কি, শিল্প কাকে বলে ও কি কি, শিল্প শব্দের অর্থ এক কথায় কী? যে বা যারা এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেতে চান তাদের আজকের আলোচনা পর্বে জানাই স্বাগতম।
বিভিন্ন টেস্ট পরীক্ষায় বা চাকরির পরীক্ষায় সাধারণত এ-ধরনের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন এসে থাকে, এছাড়াও নিজেদের সাধারণ জ্ঞান বৃদ্ধিতেও বিভিন্ন শব্দের প্রতিশব্দ বা সমার্থক শব্দ সম্পর্কে অবগত থাকাও জরুরী। তাই আসুন শিল্প শব্দের অর্থ কি কি হতে পারে তা জানি।
শিল্প শব্দের অর্থ কি?
শিল্প শব্দের অর্থ দক্ষতা, নৈপুণ্য, কারুকর্ম, ক্রিয়াকৌশল বা নিপুনভাবে কিছু করা এগুলোকে বোঝায়। শিল্প শব্দটি ইংরেজি প্রতিশব্দ Art, যেটা ব্রেক ভাষা থেকে রূপান্তরিত ল্যাটিন শব্দ Ars থেকে এসেছে।
আপনি যদি কিছুটা অনুসন্ধান করেন তাহলে জানতে পারবেন প্রাচীনকালে Ars শব্দটি বর্তমানকালের Craft অর্থে ব্যবহার করা হতো। আর কবিতার মত কল্পনার প্রধান শিল্প কেউ সেখানে বলা হত Craft of Poetry.
তবে শব্দের উৎপত্তি ও বুৎপত্তিগত বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে, শিল্প বাংলা শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ থেকে। যার অর্থ দক্ষতা, নৈপুণ্যবানীপুরভাবে কিছু করা। আর এই ব্যুৎপত্তিগত বিশ্লেষণ থেকেই এটা বোঝা যায়, শিল্প কেবল চিত্র বা সংগীত নয় বরং যে কোন সৃজনশীল এবং দক্ষতার ভিত্তিতে করা কাজই শিল্পের অন্তর্ভুক্ত।
শিল্প শব্দের প্রাথমিক সংজ্ঞা
শিল্প শব্দের অর্থ কি এটা আমরা জেনেছি। তাছাড়াও উল্লেখ করেছি শিল্প হচ্ছে সংস্কৃত শব্দ থেকে আগত একটি শব্দ। শিল্প শব্দের ইংরেজি Art, আর এটির একাধিক সমার্থক শব্দ রয়েছে। যদি এর প্রাথমিক সংজ্ঞা বলতে যাই তাহলে বলা যেতে পারে– শিল্প হচ্ছে এক অপূর্ব বস্তু, যা একমাত্র বিশেষ প্রতিভার দ্বারাই নির্মাণ করা সম্ভবপর।
আবার শিল্প শব্দটি শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে চিত্রকলা, সংগীত, নৃত্য কিংবা নাটকের দৃশ্য। তবে শিল্পের অর্থ শুধু এই কয়েকটির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি বহুমাত্রিক শব্দ যার মূল নির্যাস হল সৌন্দর্য প্রকাশ ও সৃজনশীলতা।
অভিধান অনুযায়ী যদি শিল্পের মানে খুঁজতে যান তাহলে জানতে পারবেন– শিল্প হল এমন এক প্রক্রিয়া বা কাজ, জানান্দনিক সৌন্দর্য সৃষ্টি করে এবং মানুষের রুচির পরিপূর্ণতা ঘটায়। অতএব শিল্পের মধ্যে থাকতে হবে সৃজনশীলতা নান্দনিকতা এবং একটি বার্তা।
সত্যি তো এটাই, শিল্প বিষয়টি মানব সভ্যতার উন্মেষের সমানুপাতে রূপ লাভ করেছে। যতদিন মানুষের সভ্যতার প্রকৃত বিকাশ ঘটেনি ততদিন সে নিষ্ঠুর প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে শুধুমাত্র জীবন ধারণের জন্য ব্যপৃত ছিল, কিন্তু যবে থেকে মানুষ তার জীবন ধারণের সমস্যা কিছুটা দূর করতে পারে তখন থেকেই জীবন ও জগতের সৌন্দর্যের বন্ধ কামরার জানালাগুলো খুলতে শুরু করে।
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন– শিল্প হচ্ছে তাই যার নিছক প্রয়োজনের অতিরিক্ত একটি তাগিদ থেকে মানুষকে চালনা করে, শিল্প সৃষ্টিতে নিযুক্ত করে। এজন্য আমরা বলতে পারি শিল্প শব্দটি প্রায় মানব সভ্যতার মতোই সু-প্রাচীন।
এখন আসুন শিল্পের প্রকারভেদ সম্পর্কে ধারণা নেই। পাশাপাশি আরো জানি– শিল্পের গুরুত্ব আধুনিক যুগের শিল্পের রূপান্তর ও শিল্প নিয়ে কিছু ভুল ধারণা সম্পর্কে। পাশাপাশি ভবিষ্যতের শিল্প কোন পথে এগোচ্ছে এই সম্পর্কেও কিছুটা আলোচনা করি।
শিল্প সমার্থক শব্দ দেখে নিন
- কলা
- সৃজনশীলতা
- কর্মশিল্প
- কারুশিল্প
- হস্তশিল্প
- চিত্রকলা
- শিল্পকর্ম
- সৃজনশীল শিল্প
- সংস্কৃতি
সমাজে শিল্পের গুরুত্ব
শিল্প মানুষের মন ও মস্তিষ্কের এক অপূর্ব সৃষ্টি। এটি মানুষের আবেগ, চিন্তা, কল্পনা এবং অভিজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। সমাজে শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম, কারণ এটি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং মানুষের সংস্কৃতি, ইতিহাস, এবং চেতনার বাহক। যদিও লক্ষ্য করলে দেখবেন অনেকেই মনে করেন শিল্প শুধুই বিনোদনের জন্য। কিন্তু সত্যি তো এটাই শিল্প শুধুমাত্র বিনোদন নয় এটা শিক্ষার সহায়ক, সামাজিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি ও মানসিক সুস্থতার এক নির্ভরযোগ্য মাধ্যম।
যদি এর গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে যাই তাহলে প্রথমত এটা বলা যেতে পারে– শিল্প সমাজের আয়না। একজন শিল্পী তার চারপাশের সমাজকে যেমন দেখে তেমনভাবেই তা রঙ, শব্দ, বা রূপের মাধ্যমে তুলে ধরে। চিত্রকলা, সংগীত, নাটক, সাহিত্য—এসব শিল্পমাধ্যমে সমাজের সমস্যাবলী, মানুষের অনুভূতি, সংগ্রাম ও সাফল্য প্রতিফলিত হয়।
আবার শিল্প মানুষের মনকে কোমল করে এবং তাকে সহানুভূতিশীল ও মানবিক করে তোলে। একটি গান, কবিতা কিংবা চিত্র মানুষের অন্তরে যে স্পর্শ আনে, তা অন্য কোনো মাধ্যম এতটা গভীরভাবে পারে না।
এছাড়াও যদি শিল্পের গুরুত্ব খুঁজতে চান তাহলে এটাও বুঝতে পারবেন যে, শিল্প শিক্ষার অন্যতম শক্তিশালী মাধ্যম। ইতিহাস, নৈতিকতা, জীবনদর্শন এসব অনেক সহজে এবং হৃদয়গ্রাহীভাবে উপস্থাপন করা যায় শুধুমাত্র এই শিল্পের মাধ্যমে। শিশুদের শিক্ষায় নাটক, গান, ও ছবি শেখানোর গুরুত্ব এখন সারাবিশ্বে স্বীকৃত। যার অন্যতম কারণ শিল্পকলা।
এছাড়াও শিল্প অর্থনৈতিক উন্নয়নেও অবদান রাখে। একবিংশ শতাব্দীতে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি, ডিজাইন, সংগীত, ফটোগ্রাফি ইত্যাদি অনেক মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, শিল্প শুধু সমাজকে সুন্দর করে তোলে না, বরং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শক্তিও জোগায়। তাই সমাজে শিল্পের চর্চা ও সংরক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। তবে আপনি যদি শিল্পের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানেন তাহলে বুঝতে পারবেন শিল্প সাধারণত কোন কোন শ্রেণীর মধ্যে আবদ্ধ! তাই এ পর্যায়ে শিল্পের প্রকারভেদ নিয়ে কথা বলছি।
শিল্পের প্রকারভেদ | শিল্প কত প্রকার ও কি কি?
প্রধানত শিল্পকে চারটে ভাগে ভাগ করা হয়। সেগুলো হলো
- চারু শিল্প
- কারু শিল্প
- কার্য শিল্প ও
- প্রযোজন শিল্প
আপনি নিশ্চয়ই চার শিল্প এবং কারো শিল্পের সাথে পরিচিত হয়ে থাকবেন। কেননা প্রাথমিক শ্রেণীতেই আমাদের এই নিয়ে শিক্ষা দেওয়া হয়। যাইহোক তবুও বোঝার সুবিধার্থে সংক্ষেপে কিছু বিষয় উল্লেখ করছি, যা আলাদা আলাদা এই চারটি শিল্প সম্পর্কে আপনার ধারণা তৈরি করবে।
চারু শিল্প: চারুশিল্প হচ্ছে সে সকল শিল্প যার নান্দনিক রূপের সৌন্দর্য ও ভাব প্রকাশ করে থাকে। এর অন্তর্ভুক্ত অংশগুলো চিত্রকলা, ভাস্কর্য, স্থাপত্য, নৃত্য সংগীত নাটক সহ প্রভৃতি। আর এই শিল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দর্শকদের মনে ভাব সৌন্দর্য ও অনুভূতির সোচ্চার ঘটানো।
কারুশিল্প: ব্যবহারিক শিল্প বলা হয়ে থাকে কারো শিল্পকে। যা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। যদি এই শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বিষয় তুলে ধরি তাহলে বলা যেতে পারে- কাঠের কাজ, মৃৎ শিল্প, ধাতব শিল্প পোশাকে নকশা ও গহনা তৈরি ইত্যাদি এগুলো হচ্ছে কারুশিল্পের অন্তর্ভুক্ত অংশ।
কার্য শিল্প: কার্য শিল্প বলতে বোঝায় যেসব শিল্প কাজের উপযোগিতা পূরণ করে।
প্রযোজন শিল্প: প্রযোজন শিল্প ও শিল্পকলার মাধ্যমে বাস্তব জীবনের চাহিদা পূরণ করে। যেমন মনসজ্জা ফ্যাশন ডিজাইন সহ প্রভৃতি।
শিল্প নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা
শিল্প শব্দের অর্থ কি, শিল্প এর অপর অর্থ কি, শিল্প কাকে বলে ও কি কি, শিল্প শব্দের অর্থ এক কথায় কি? এই প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটির উত্তর বলা যায় একই। যা ইতোমধ্যে আমরা উল্লেখ করেছি। মানে শিল্পের অর্থ দাঁড়ায় কৃতিমতা, নৈপুণ্য, ধূর্ততা দক্ষতা বা সৃজনশীলতা।
আর এ পর্যন্ত আমরা শিল্প নিয়ে যে আলোচনা করেছি আশা করছি আপনাদের একটি মোটামুটি ধারণা হয়েছে। তবে শিল্প নিয়ে মানুষের মনে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা রয়েছে। সেগুলো কি কি? যারা জানতে চান তারা নিজের পয়েন্টগুলো দেখুন।
শিল্প নিয়ে মানুষের ভুল ধারণা হচ্ছে–
- শিল্প মানেই শুধু ছবি আঁকা বা গান গাওয়া
- শিল্প কে পেশা হিসেবে নেওয়া যায় না মানে শিল্পীদের জীবিকা চালানো দুষ্কর
- শিল্প মানেই বিলাসিতা বা অবসরের কাজ
- শিল্প নিয়ে পড়াশোনা করলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার বা শিল্পে বাস্তবতা থাকতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমাদের শেষ কথা: তো পাঠক বন্ধুরা, শিল্প শব্দের অর্থ কি এই নিয়ে আজকের আলোচনা এপর্যন্তই। আপনি যদি এ ধরনের আরো কোনো প্রশ্নের উত্তর জানতে চান তাহলে কমেন্ট করুন। সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন আল্লাহ হাফেজ।