অনেকেই ভিসার আপডেট জানতে গিয়ে বিভ্রান্ত হন– ভিসা কি অ্যাপ্রভ হলো? কোন সমস্যা আছে কি? এসব প্রশ্নের সহজ সমাধান হলো অনলাইনে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা চেক করা। কেননা যাত্রা করার আগে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ ভিসা স্ট্যাটাস জানা।
অনেকেই মনে করেন এই তথ্য জানার জন্য হয়তো কনসালট্র্যান্ট বা এজেন্সির সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু সত্যি বলতে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে দুবাই ভিসা ঘরে বসে চেক করা সম্ভব। তাই যারা সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ভিসার জন্য আবেদন করেছেন তারা আজকের নিবন্ধটি থেকে জেনে নিন– ঘরে বসে দুবাই ভিসা চেক করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত।
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে দুবাই ভিসা চেক
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে দুবাই ভিসা চেক করতে হলে সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে অনলাইনে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ব্যবহার। আর এই সরকার পাসপোর্ট সংক্রান্ত কার্যাবলীর উদ্দেশ্যে দুটি নির্ভরযোগ্য প্ল্যাটফর্ম প্রদান করেছে, সেগুলো হলো GDRFA (General Directorate of Residency and Foreigners Affairs) ICP (Federal Authority for Identity, Citizenship, Customs & Port Security), আর এই দুই ওয়েবসাইটের যেকোনো একটিতে গিয়ে আপনি প্রয়োজনীয় কিছু ইনফরমেশন পূরণ করে সার্চ করলেই পাসপোর্ট ভিসার বিস্তারিত তথ্য কালেক্ট করতে পারবেন।
দুবাই ভিসা চেক অনলাইন | পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে দুবাই ভিসা চেক এর নিয়ম
দুবাই ভিসা অনলাইনে চেক করতে প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য সবার প্রথমে লাগবে। এরপর আপনাকে ভিজিট করতে হবে ওই দেশের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট। প্রয়োজনীয় তথ্য হিসেবে কালেক্ট করবেন ভিসার জন্য আবেদনকৃত ব্যক্তির জন্ম তারিখ, জাতীয়তা এবং বৈধ পাসপোর্ট নাম্বার। অতঃপর নিচের দেওয়া ইনস্ট্রাকশন মেনে পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে দুবাই ভিসা চেক করবেন। বিষয়টি বুঝতে এক নজরে নিচের অংশটুকু দেখুন ও চেষ্টা করুন।
প্রথমত: একটি গুগল ক্রোম ব্রাউজার ওপেন করুন এবং সেখানে গিয়ে সার্চ করুন ICP অথবা GDRFA লিখে। তাইলে সরাসরি সাজেস্ট কৃত লিঙ্কে ক্লিক করে উক্ত ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। দুবাই ভিসা চেক এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট লিংক (www.gdrfad.gov.ae) অথবা (https://smartservices.icp.gov.ae/echannels/web/client/default.html#/fileValidity)
দ্বিতীয়ত: উপ ওয়েবসাইট ভিজিট করার পর মেনুবার থেকে ক্লিক করুন public services অপশনে।
তৃতীয়ত: এরপর উক্ত পেজ থেকে File validity অপশনে ক্লিক করুন।
চতুর্থত: আপনার সামনে যে ফরম প্রদান করা হয়েছে সেখানে আপনার পাসপোর্ট নাম্বার এবং পাসপোর্ট এর মেয়াদ ও তারিখ সহ প্রয়োজনীয় ইনফরমেশন প্রদান করুন। অতঃপর ক্লিক করুন Visa অপশন টি তে।
পঞ্চমত: সাজেস্কৃত ক্যাপচা কোড পূরণ করুন অথবা আই এম নট এ রোবট এ টিক দিয়ে ক্লিক করুন সার্চ বাটনে। ব্যাস, কিছু সময়ের মধ্যেই আপনি আপনার পাসপোর্ট এর বর্তমান অবস্থা কি তা জানতে পারবেন।
একইভাবে আপনি যদি দুবাই ভিসা যাচাই করনের জন্য (https://www.gdrfad.gov.ae/en) ওয়েবসাইটে যান সে ক্ষেত্রে চাইতে ভিজিট করে services অপশন থেকে ক্লিক করবেন visa inquiry অপশন টি। এরপর আপনার আবেদন আইডি পাসপোর্ট নাম্বার অথবা Emirates আইডি নম্বর প্রদান করে সার্চ বাটনে ক্লিক করবেন। কিছু সময়ের মধ্যে ভিসার স্ট্যাটাস বৈধতা এবং অন্যান্য তথ্য প্রদর্শিত করা হবে আপনার সামনে এবং আপনি বিস্তারিত জানতে পারবেন ও নিশ্চিত হতে পারবেন আপনার ভিসা সঠিক রয়েছে কিনা!
দুবাই ভিসা চেক সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তর
১. দুবাই ভিসা চেকের সহজ উপায় কি?
✓ দুবাই ভিসা চেকের সহজ এবং নিরাপদ উপায় হচ্ছে তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে পাসপোর্ট নাম্বার এবং প্রয়োজনীয় আরো কিছু তথ্য প্রদান করে তা কালেক্ট করা। এটি আপনি চাইলে মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সংগ্রহ করতে পারবেন।
২. মোবাইল অ্যাপ দিয়ে দুবাই ভিসা চেক করার উপায় কি?
✓ মোবাইল অ্যাপ দিয়ে দুবাই ভিসা চেক করতে চাইলে প্রথমত আপনাকে আপনার মোবাইলে গুগল প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করতে হবে GDRFA Dubai App বা UAEICP App যে কোন একটি অ্যাপ, অতঃপর ইনস্টলেশন কার্যপ্রক্রিয়ার সম্পাদনের পরবর্তীতে আপনি উক্ত অ্যাপ ওপেন করে visa inquiry অপশনে গিয়ে মাত্র কয়টি ইনফরমেশন প্রদান করে মাত্র এক মিনিটে কালেক্ট করতে পারবেন বিশেষ স্ট্যাটাস।
৩. আরব আমিরাত এর ওয়ার্ক পারমিট ভিসা চেকের অন্যান্য উপায় কি?
✓ অনলাইনে কোন কোন ওয়েবসাইট বা মোবাইল ফোনে কোন অ্যাপ ব্যবহার করে ভিসার বর্তমান স্ট্যাটাস চেক করা যায় আমরা উল্লেখ করেছি। কিন্তু যারা অন্যদের মাধ্যমে এটা কালেক্ট করতে চান তারা মূলত দুবাইয়ের ভিসা চেকের অন্যান্য আরো কোনো উপায় রয়েছে কিনা জানতে চান। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি অনেক এয়ারলাইন্স রয়েছে যারা ভিসা স্ট্যাটাস চেক করার সেবা দিয়ে থাকে। তাই আপনি চাইলে তাদের সহযোগিতা নিতে পারেন। যেমন–Emirates, FlyDubai.
৪. এক্সপায়ার হওয়া ভিসা সনাক্তকরণের উপায় কি?
✓ আমরা জানি ভিসা সাধারণত ৩০ বা ৯০ দিন মেয়াদী হয়ে থাকে। তো আপনার ভিসাটির যদি মেয়াদ না থাকে সেক্ষেত্রে ভিসার স্ট্যাটাস কোনটা দেখে বুঝবেন? এসময় expired লেখা সাজেস্ট করা হবে।
৫. এপ্রুভড পেন্ডিং ও রিজেক্টেড স্ট্যাটাস এর মানে কি ভিসার ক্ষেত্রে?
✓ বিশেষ স্ট্যাটাস চেক করার সময় যদি আপনার সামনে অ্যাপ্রুড পেন্ডিং বা রিজেক্টটেড দেখায় সে ক্ষেত্রে এই স্ট্যাটাসের মানে জানতে হবে। এখানে এপ্রুভড বলতে বুঝিয়েছে, আপনার ভিসা অনুমোদিত হয়েছে। আর পেন্ডিং বলতে বুঝিয়েছে এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ভিসাটি আর রিজেক্টেড মানে ভিসা বাতিল করা হয়েছে।
যদি রিজেক্টেড হয়ে থাকে তাহলে এর কারণ সম্পর্কে জানুন অতঃপর পাসপোর্ট ও ভিসা এজেন্সির সাথে বা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে কন্টাক্ট অপশনে গিয়ে তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপচারিতা করুন এবং সমস্যার সমাধান করুন।
৬. ভিসা চেক করার সময় ভুল পাসপোর্ট নাম্বার দিলে কি দেখায়?
✓ অনেকেই বেখেয়ালিপণার কারণে ভিসা চেক করার সময় ভুল পাসপোর্ট নাম্বার বসিয়ে ট্রাই করেন। ফলে স্ট্যাটাস দেখা যায় না এক্ষেত্রে no record found এমন কিছু দেখাতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার করণীয় হবে পুনরায় সঠিক পাসপোর্ট নাম্বার বসিয়ে দুবাই ভিসা চেক করা।
৭. কিভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় ভিসা আসল?
✓ আপনার ভিসাটি আসল নাকি নকল এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য কয়েকটি বিষয় খুঁটিয়ে দেখলেই যথেষ্ট। কেননা সাধারণত জাল ভিসার লক্ষণ গুলো হচ্ছে, এটি প্রচলিত ফরমেটের বাইরে লেখা হয়ে থাকে এবং অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে খুঁজে পাওয়া যায় না সেই সাথে হ্যান্ড এডিটেড বা স্ক্রিনশট দেওয়া। তাই এই বিষয়গুলো ভালোভাবে লক্ষ্য রাখুন।
আর হ্যাঁ ভিসা চেক এর ক্ষেত্রে কখনোই whatsapp বা পিডিএফ ফাইল এর উপর নির্ভর করবেন না। জালিয়াতির হাত থেকে বাঁচতে আমরা পরামর্শ দিব অফিশিয়াল সোর্স থেকে ভিসা কালেক্ট করার। কেননা অফিসিয়াল ওয়েবসাইটই একমাত্র নির্ভরযোগ্য মাধ্যম ভিসা স্ট্যাটাস চেকের ক্ষেত্রে।
৮. ভিসার মেয়াদ ও নবায়ন প্রক্রিয়া কি?
✓ ভিসার মেয়াদ এবং নবায়ন প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইট থেকে অন্যান্য আরো কিছু আর্টিকেল পড়তে পারেন। আর টুরিস্ট ভিসা সাধারণত 30 বা 90 দিনের হয়ে থাকে আর মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নবায়ন করতে হয়। ভিসা বা পাসপোর্ট নবায়নের নিয়ম সম্পর্কিত কন্টেন্ট রয়েছে আমাদের ওয়েবসাইটে তাই অনুসন্ধান করে পড়ুন।
৯. ট্রাভেল এজেন্ট গাছের সময় কি বিষয়ে খেয়াল রাখা জরুরী?
✓ ট্রাভেল এজেন্ট বাজারের সময় লক্ষ্য রাখবেন তাদের সরকারি লাইসেন্স রয়েছে কিনা এবং তাদের রিভিউ রেট কেমন। আইটি বিষয় হচ্ছে যারা সত্যিকার অর্থে ট্রাভেল এজেন্ট মানে দোয়া নয় তারা অতিরিক্ত টাকা দাবি করে না। তাই সতর্ক থাকুন।
১০. ভিসা সংক্রান্ত স্ক্যান থেকে বাঁচার উপায় কি?
✓ ভিসা সংক্রান্ত স্ক্যাম থেকে বাঁচার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার বিজ্ঞাপন এড়িয়ে চলুন, সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন এবং অগ্রিম টাকা দেওয়ার আগে ভালোভাবে যাচাই বাছাই করুন।
১১. ভিসা স্ট্যাটাস চেক করতে কত সময় লাগে?
✓ ইন্টারনেট সংযোগ যদি ঠিকঠাক থাকে তাহলে ভিসার স্ট্যাটাস চেক করার জন্য সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ মিনিট সময় লাগে। তবে ওয়েবসাইট ডাউন থাকলে কখনো কখনো এরোর দেখাতে পারে সেক্ষেত্রে কিছু সময় অপেক্ষা করুন অথবা পুনরায় ট্রাই করুন।
১২. ভিসা স্ট্যাটাস চেক করার জন্য কত টাকা লাগে?
✓ ভিসা স্ট্যাটাস চেক করতে কোন প্রকার ফি প্রদানের প্রয়োজন পড়ে না মানে কোন নির্ধারিত অংকের টাকা লাগেনা।
১৩. ভিসা স্ট্যাটাস চেক করার সময় কোন ব্রাউজার ভালো?
✓ ভিসার স্ট্যাটাস চেক এর জন্য গুগল ক্রোম ব্রাউজার এবং মজিলা ফায়ারফক্স উত্তম।
১৪. ভিসা চেক করতে মোবাইল নাম্বার লাগে কি?
✓ না ভিসা চেক করতে কোন মোবাইল নাম্বারের প্রয়োজন পড়ে না। আপনি সরাসরি পাসপোর্ট নাম্বার বসিয়ে সাথে আরো কিছু ইনফরমেশন পূরণ করে মাত্র ১ থেকে ২ মিনিটের মধ্যে ভিসা চেক করতে পারবেন।
১৫. ভিসা রিজেক্ট হলে কি করা উচিত?
✓ যদি ভিসা স্ট্যাটাস চেক করে দেখেন যে আপনার ভিসা রিজেক্টেড হয়েছে সে ক্ষেত্রে অফিসিয়াল কারণ চিনে পরবর্তী বার সঠিকভাবে আবেদন করা উচিত।
আমাদের শেষ কথা: পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে দুবাই ভিসা চেক নিয়ে এই ছিল আমাদের আজকের আলোচনা। আলোচনা শেষ পর্যায়ে এটাই বলব দুবার ভ্রমণের আগে আপনার ভিসা স্ট্যাটাস যাচাই করুন। কেননা এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আর পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে দুবাই ভিসা চেক করুন। কারণ এটি সহজ দ্রুত এবং নিরাপদ। ভুল তথ্য বা চাল ডকুমেন্ট নিয়ে কোনরকম ঝুঁকি না নিয়ে বরং সরকারি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে নিন এতে করে ভবিষ্যতে কোন সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না।
সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, যদি পাসপোর্ট এবং ভিসা নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে কমেন্ট করতে পারেন অথবা আমাদের ওয়েবসাইট থেকে অন্যান্য আরো কিছু পোস্ট করে সহযোগিতা নিতে পারেন। সবাইকে জানাই আল্লাহ হাফেজ।